কবর জিয়ারত করার সঠিক পদ্ধতি
![]() |
কবর জিয়ারত করার সঠিক পদ্ধতি |
ভূমিকা
ইসলামে কবর জিয়ারতের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। এটি মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং জীবিতদের জন্য শিক্ষণীয়। কবর জিয়ারতের মাধ্যমে মানুষ নিজের মৃত্যু স্মরণ করতে পারে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। কিন্তু, অনেকেই জানেন না কবর জিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি কী এবং কী দোয়া পড়া উচিত। তাই, আজকের ব্লগে আমরা কবর জিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি, দোয়া ও কিছু করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কবর জিয়ারতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ইসলামে কবর জিয়ারত সুন্নত হিসেবে প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
"আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা, এতে মৃত্যু স্মরণ করিয়ে দেয়।"
(মুসলিম, ৯৭৬)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কবর জিয়ারত শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার মাধ্যম নয়, বরং এটি জীবিতদের জন্যও একটি শিক্ষা।
কবর জিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি
১. পবিত্রতা বজায় রাখা
কবর জিয়ারতে যাওয়ার আগে অজু করে নেয়া উত্তম। এটি ইবাদতের একটি অংশ এবং দোয়ার গ্রহণযোগ্যতার জন্য সহায়ক।
২. সালাম দেওয়া
কবরস্থানে প্রবেশ করার সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া সুন্নত:
"আস-সালামু ‘আলাইকুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল-মু’মিনিনা ওয়াল মুসলিমিন, ওয়া ইন্না ইনশা আল্লাহু বি-কুম লাহিকুন। আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ্।"
অর্থ: "হে মু’মিন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহর কাছে তোমাদের এবং নিজেদের জন্য শান্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করি।" (মুসলিম, ৯৭৪)
৩. কবরের সামনে দাঁড়ানো
কবরের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ কিবলার দিকে না রেখে কবরবাসীর দিকে মুখ করে দোয়া করতে হয়। তবে, কোনোভাবেই কবরবাসীর কাছে কিছু চাওয়া বা তাদের থেকে কিছু প্রার্থনা করা উচিত নয়।
৪. দোয়া ও ইস্তিগফার করা
মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা উত্তম। কিছু দোয়া নিম্নরূপ:
"আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়িনা, ওয়া মাইয়িতিনা, ওয়া শাহীদিনা, ওয়া গাইবিনা, ওয়া সকিরিনা, ওয়া কাবিরিনা।"
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় সবাইকে ক্ষমা করুন।" (তিরমিজি, ৯৭৩)
৫. কুরআন তিলাওয়াত করা
কবরের কাছে কুরআনের কিছু আয়াত যেমন সূরা ফাতিহা, সূরা ইয়াসিন, সূরা মুলক, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়া উত্তম।
৬. বিদআত থেকে বিরত থাকা
কবরের কাছে মোমবাতি জ্বালানো, কাপড় বা মালা ঝুলানো, কবরবাসীর কাছে কোনো কিছু চাওয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বিদআত। রাসূল (সা.) এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
কবর জিয়ারতের সময় করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমূহ
✅ করণীয়:
- নফল সালাত আদায় করে কবর জিয়ারতে যাওয়া।
- কবরস্থানে প্রবেশের সময় সালাম দেওয়া।
- মৃতদের জন্য ক্ষমা ও রহমতের দোয়া করা।
- কুরআন তিলাওয়াত করা।
- নীরব ও বিনম্রভাবে কবরস্থানে অবস্থান করা।
❌ বর্জনীয়:
- কবরবাসীর কাছে কিছু চাওয়া।
- কবর চুম্বন করা বা হাত বুলানো।
- কবরের মাটি সংগ্রহ করা বা অন্য কোনো অযৌক্তিক কাজ করা।
- উচ্চস্বরে কান্নাকাটি বা মাতম করা।
- নারীদের জন্য প্রয়োজন ছাড়া কবর জিয়ারতে যাওয়া।
উপসংহার
কবর জিয়ারত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা মানুষের ঈমানকে মজবুত করে এবং মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে, সঠিক পদ্ধতিতে কবর জিয়ারত করাই উত্তম। আমরা যদি রাসূল (সা.) প্রদর্শিত নিয়ম মেনে কবর জিয়ারত করি, তাহলে এতে আমাদের এবং মৃতদের জন্য কল্যাণ হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক নিয়ম মেনে কবর জিয়ারত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন