তারাবির নামাজের দোয়া: গুরুত্ব, ফজিলত ও সম্পূর্ণ গাইড
![]() |
তারাবির নামাজের দোয়া: গুরুত্ব, ফজিলত ও সম্পূর্ণ গাইড |
ভূমিকা
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় একটি মাস। এই মাসে আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত ও মাগফিরাত লাভের সুযোগ থাকে। তারাবির নামাজ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা এশার নামাজের পর বিশেষভাবে আদায় করা হয়।
তারাবির নামাজের পর দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় এবং জান্নাত লাভের আশা করা হয়। আজকের এই ব্লগে আমরা তারাবির নামাজের দোয়া, এর গুরুত্ব, ফজিলত ও সহীহ দোয়ার বিস্তারিত আলোচনা করব।
তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
১. রাসুল (সা.) এর সুন্নত
তারাবির নামাজ নবী করিম (সা.) এর একটি সুন্নত। তিনি স্বয়ং সাহাবিদের নিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন এবং এটি পড়তে উৎসাহিত করেছেন।
২. গুনাহ মাফের সুযোগ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানে রাতে (তারাবির নামাজ) কায়েম থাকে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
(সহিহ বুখারি: ২০০৮, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)
৩. কিয়ামুল লাইলের ফজিলত
তারাবির নামাজ মূলত কিয়ামুল লাইলের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।
তারাবির নামাজের পর বিশেষ দোয়া
তারাবির নামাজের পর আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন, যা তারাবির পর পড়া যেতে পারে।
তারাবির নামাজের দোয়া (আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ)
দোয়া ১:
আরবি:
اللهم اجعلنا من المقبولين، واغفر لنا ذنوبنا، وتقبل منا صلاتنا وصيامنا وقيامنا، واجعلنا من عبادك الصالحين.
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাজআলনা মিনাল মাকবূলীন, ওয়াগফির লানা যুবানানা, ওয়াতাক্বাব্বাল মিননা সালাতানা ওয়া সিয়ামানা ওয়া কিয়ামানা, ওয়াজআলনা মিন ইবাদিকাস সালিহীন।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আমাদের কবুলকৃতদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের নামাজ, রোজা এবং তারাবির নামাজ কবুল করুন এবং আমাদের আপনার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
দোয়া ২:
আরবি:
اللهم إنك عفو كريم تحب العفو فاعف عنا
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন করীমুন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্না।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। আপনি ক্ষমাকে ভালোবাসেন, আমাদের ক্ষমা করুন।
তারাবির নামাজের দোয়া কবুলের আমল
১. খালেস নিয়ত করুন: শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করুন।
২. আল্লাহর প্রশংসা করুন: দোয়ার আগে ও পরে আল্লাহর প্রশংসা করা দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত।
৩. দরুদ শরীফ পড়ুন: নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।
৪. মনোযোগ সহকারে দোয়া করুন: অন্তর থেকে দোয়া করলে তা আল্লাহর দরবারে দ্রুত কবুল হয়।
তারাবির নামাজের নিয়ম সংক্ষেপে
- তারাবির নামাজ ২০ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, তবে ৮ রাকাতও পড়া যায়।
- প্রতি দুই রাকাত পর সালাম ফেরানো উত্তম।
- কোরআন খতম করা মুস্তাহাব হলেও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ছোট সূরা দিয়েও পড়া যায়।
- নামাজ শেষে বিশেষ দোয়া করা উত্তম।
শেষ কথা
তারাবির নামাজ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ করে দেয়। এই নামাজের পর দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই আমাদের উচিত আন্তরিকভাবে দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য কাঁদা।
আশা করি, এই ব্লগ থেকে তারাবির নামাজের দোয়া ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বরকতময় ইবাদত কবুল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন